অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে পারিবারিক স্নেহবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এদিন রাজধানীর রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ এলাকায় মাস্তুল ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড অরফানেজ শেলটার হোমের শিশুদের হাতে ফুল ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ও তার স্ত্রী, শোনেন শিশুদের কথা, কবিতা ও গান।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মাস্তুলের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারেন তথ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সেখানে যান তথ্যমন্ত্রী ও তার সহধর্মিণী নুরান ফাতেমা। এসময় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন উপস্থিত ছিলেন।
এদিন দুপুরে নুরান ফাতেমা শিশুদের জন্য রান্না করা খাবার পাঠান। অফিস শেষে বিকেলে মন্ত্রী সস্ত্রীক সেখানে যাওয়ার সময় জামাকাপড়সহ উপহারসামগ্রী ও নানা ধরনের খেলনা নিয়ে যান। মাস্তুলের প্রতিষ্ঠাতা কাজী রিয়াজ রহমান, উপদেষ্টা কাজী মাইনুর রহমান ও প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা তাদের স্বাগত জানান। মন্ত্রী ও তার স্ত্রী প্রত্যেক শিশুর হাতে রজনীগন্ধা তুলে দেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, যারা পরিবারের স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত, যারা স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়, কেউ যাদের স্বপ্ন দেখাতেও চায় না, সেসব শিশু ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে নিয়ে এসে মাস্তুল ফাউন্ডেশন আশ্রয় দিয়েছে, শিশুশিক্ষা ও বয়স্কদের কর্মের সুযোগ করে দিয়েছে। সেজন্য এই পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আমি এখানে তাদের কাছে এসেছি।
তিনি বলেন, আমি শুধু একজন মানুষ হিসেবেই এখানে এসেছি, তবুও আমার রাজনৈতিক পরিচয় আছে। আমার পরিবার যেমন আমাকে মমত্ববোধ শিখিয়েছে, তেমনি আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকেও দেখেছি। আজ আমরা ক্ষমতায়, যখন ক্ষমতায় ছিলাম না তখন দেখেছি, বিশাল গাড়িবহর নিয়ে চলার সময় জননেত্রীর গাড়ির সামনে যদি কোনো ভিক্ষুক এসে পড়তো, পুরো বহর থেমে যেতো। শেখ হাসিনা তাকে সাহায্য করতেন।
যে ঘটনা মন্ত্রীকে মাস্তুল ফাউন্ডেশনে যেতে উৎসাহিত করেছে সেটির বর্ণনা দিতে গিয়ে ড. হাছান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, ঢাকায় বিমানবন্দরের পাশে এক আশ্রয়কেন্দ্রে বাবার সঙ্গে থাকা অল্পবয়সী ছেলে রোজ বিমান ওড়া দেখতো। একদিন সে বাবাকে বললো- বাবা আমি বড় হয়ে পাইলট হতে চাই। বাবা ধমক দিয়ে বললেন- যা, কাজে যা। সেই ছেলেটিকে মাস্তুল ফাউন্ডেশন নিয়ে এসেছে, পড়াশোনা করাচ্ছে। আমি তার স্বপ্নপূরণের জন্য প্রার্থনা করি।
দিন ড. হাছান মাহমুদ মাস্তুল স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র এবং এতিমখানা উদ্বোধন করেন এবং অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে স্থাপনাগুলো পরিদর্শন ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় মাস্তুল ফাউন্ডেশনের স্বাবলম্বী প্রকল্পের দুইজন বিধবাকে দুটি সেলাই মেশিন এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পে সেবার আওতায় থাকা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত একজন রোগীর হাতে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন মন্ত্রী। স্কুল এবং শেলটার হোমের শিশুরা এসময় গান ও ছড়া পরিবেশন করে। পরে সংস্থার পরিদর্শন বইতে মন্ত্রী লেখেন, ‘এই অসাধারণ কার্যক্রমের জন্য মাস্তুল ফাউন্ডেশনকে অসংখ্য ধন্যবাদ।’
মাস্তুল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমান বলেন, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তার স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে অতিথি হিসেবে পেয়ে আমরা অভিভূত এবং তাকে আমাদের প্রকল্পগুলো দেখাতে পেরে খুবই উচ্ছ্বসিত। আমরা শুধু দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আজ মন্ত্রী এসে আমাদের আরও অনুপ্রেরণা দিলেন। দুই লাখ টাকা দিলেন। এই অনুপ্রেরণাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আগামীতে আরও কাজ করে যাবো।
মাস্তুলের উপদেষ্টা মাইনুর রহমান জানান, দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত মাস্তুল ফাউন্ডেশন ২০১৩ সাল থেকে নিজস্ব স্কুল ও এতিমখানায় ২০০ শিশুর শিক্ষা, আহার ও আবাসনের পাশাপাশি ১২ জেলার ২২টি স্কুলে সহস্রাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাগ, জুতা-মোজা বই-খাতাসহ সব শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। এর স্বাবলম্বী প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৭৫০ জন স্বাবলম্বী হয়েছেন। এছাড়া সংস্থাটি মৃত ব্যক্তিদের জানাজা, দাফন ও সৎকার করে থাকে।
Leave a Reply